স্বদেশ ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইতে ভয়াবহ দাবানলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৯৩ জনে দাঁড়িয়েছে। গত এক শতাব্দীরও বেশি সময়ের মধ্যে এমন ভয়াবহতা দেখেনি দেশটি। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে কারণ, এখনও মাউই দ্বীপের বহু এলাকায় অনুসন্ধান চলছে। দাবানলে দ্বীপটির লাহাইনা শহরের বড় একটি অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে। এ খবর দিয়েছে আল-জাজিরা।
খবরে জানানো হয়, মূলত রিসোর্টের জন্য বিখ্যাত এই দ্বীপটিতে ১২ হাজার মানুষ বাস করতেন। কিন্তু এখন এর বেশিরভাগ এলাকাই ছাই হয়ে গেছে। এর বিশ্ববিখ্যাত হোটেল ও রেস্টুরেন্টগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। গভর্নর জোশ গ্রিন শনিবার সাংবাদিকদের বলেন, দাবানল বাড়তেই থাকবে। আমরা পরিস্থিতির জন্য সবাইকে প্রস্তুত করতে চাই। এটি নিশ্চিত ভাবেই হাওয়াইর ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়।
ঐতিহাসিক ফ্রন্ট স্ট্রিটে ধ্বংসযজ্ঞ পরিদর্শন করার সময় এসব কথা বলেন গ্রিন।
এর আগে ২০১৮ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার প্যারাডাইস শহরে দাবানলে ৮৫ জন মারা গিয়েছিল। সেই সংখ্যাকে ছাড়িয়ে হাওয়াইর এই দাবানল গত ১০০ বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবথেকে বেশি মর্মান্তিক দুর্যোগের রেকর্ড গড়েছে। ১৯১৮ সালে দেশটির মিনেসোটা এবং উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যে দাবানলে ৪৫৩ জন নিহত হয়েছিলেন। সেই ঘটনার পর এবার হাওয়াইর দাবানলই সবথেকে বেশি প্রাণ কেড়েছে।
মাউই দ্বীপের পুলিশ প্রধান জন পেলেটিয়ার বলেছেন যে, দাবানলে পুড়ে যাওয়া অঞ্চলগুলোর সামান্য একটি অংশে উদ্ধার চালানো হয়েছে। নিহত ৯৩ জনের মধ্যে মাত্র দুজনকে শনাক্ত করা গেছে। কারণ বাকি মরদেহগুলো একেবারেই পুড়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, মৃতদেহ শনাক্ত করার জন্য প্রশিক্ষিত কুকুরদের আনা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র তিন শতাংশ এলাকা অনুসন্ধান করা গেছে। উদ্ধার হওয়া মরদেহ প্রসঙ্গে জন বলেন, এগুলির প্রত্যেকটিকে সনাক্ত করার জন্য আমাদের দ্রুত ডিএনএ পরীক্ষা করতে হবে। যখন আমরা দেহাবশেষগুলো তুলছিলাম, তখন এগুলো ভেঙে পড়ছিল।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি (ফেমা) বলছে, লাহাইনা শহরের পুনর্র্নিমাণে কমপক্ষে ৫.৫ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন পড়বে। শহরটিতে দুই হাজার ২০০ টিরও বেশি অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। ২১০০ একর বা ৮৫০ হেক্টরের বেশি বন পুড়ে গেছে সেখানে। গভর্নর গ্রীন বলেন, আমাদের প্রধান ফোকাস এখন মানুষদের পুনরায় একত্রিত করা এবং তাদের আবাসন ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। এরপর আমরা পুনর্র্নিমাণের দিকে মনোনিবেশ করবো। তিনি জানান যে, পরিস্থিতি আগের পর্যায়ে নিয়ে অনেক অনেক সময় লাগবে।
হাওয়াইয়ান কর্তৃপক্ষ আগুন নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন যে, সরকারের তরফ থেকে কোনও ধরনের সতর্কতা ছিল না। ভিলমা রিড নামের একজন এএফপিকে বলেন, আমাদের পেছনের পাহাড়ে আগুন লেগেছিল। কিন্তু আমরা সেটা টের পেয়েছি যখন আগুন আমাদের রাস্তার ওপারে চলে এসেছিল। দাবানলে রিডের বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। তিনি জানান, তিনি এখন মানুষের সহায়তা পেয়ে বেঁচে আছেন। তিনি তার মেয়ে, নাতি ও বিড়াল নিয়ে তার একমাত্র গাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি এবং প্যাসিফিক ডিজাস্টার সেন্টার বলছে, প্রায় ৪৫০০ মানুষ এখন খোলা আকাশের নিচে বাস করছে। গৃহহীনদের জন্য এক হাজার হোটেল রুম বরাদ্দ দেয়ার চেষ্টা চলছে। এছাড়া জরুরি আশ্রয় কেন্দ্রে ১৪০০ জন থাকতে পারবেন বলে জানান গভর্নর গ্রিন। মাউই পুলিশ জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাটিকে নিরাপদ ঘোষণা না করা পর্যন্ত জনসাধারণের সদস্যদের লাহাইনায় প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। দুর্যোগের এলাকায় কেউ প্রবেশ করলে তার ২ হাজার ডলার জরিমানার ঘোষণা দিয়েছে পুলিশ।